মঙ্গলবার ● ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৬
প্রথম পাতা » বিজ্ঞান সংবাদ: মহাকাশ » সন্ধান মিলল মহাকর্ষীয় তরঙ্গের, সুদৃঢ় হলো মহাবিস্ফোরণ তত্ত্ব
সন্ধান মিলল মহাকর্ষীয় তরঙ্গের, সুদৃঢ় হলো মহাবিস্ফোরণ তত্ত্ব
বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টান শতবর্ষ পূর্বে মহাকর্ষীয় তরঙ্গের ইঙ্গিত দিলেও এযাবৎ তা অধরাই রয়ে গিয়েছিল। কিন্তু গত ১১ ফেব্রুয়ারি , ২০১৬ তারিখে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে এক সংবাদ সম্মেলনে বিজ্ঞানীরা ঘোষণা করলেন আইনস্টাইনই ছিলেন অভ্রান্ত। বিজ্ঞানীরা সংবাদ সম্মেলনে মহাকর্ষীয় তরঙ্গ সরাসরি শনাক্ত করার কথা উল্লেখ করেন।
১৯১৫ সালে সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব প্রকাশের পরে আইনস্টাইন স্থান-কাল বাঁকিয়ে দেওয়া যে তরঙ্গের কথা বলেছিলেন তা মহাকর্ষীয় তরঙ্গ বা গ্রাভিটেশনাল ওয়েভ হিসেবে পরিচিত। কিন্তু মহাকর্ষীয় তরঙ্গের কোন প্রত্যক্ষ প্রমাণ তিনি বা পরবর্তীতে অন্য কোন বিজ্ঞানী দিতে পারেননি। মহাকর্ষীয় তরঙ্গ হলো তড়িৎ-চুম্বকীয় ক্ষেত্রে আলোক তরঙ্গ সদৃশ মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রে আন্দোলনজনিত কারণে উদ্ভুত আলোর সমান বেগে (২৯৯৭৯২ কিমি/সেকেন্ড) গতিশিীল অতি ক্ষীণ তরঙ্গ। মহাকর্ষীয় তরঙ্গকে তুলনা করা চলে একটি পুকুরের শান্ত জলে ঢিল ছোড়ার পরে সৃষ্ট তরঙ্গের সাথে। ঢেউগুলো যেমন পুকুরের কেন্দ্র থেকে ক্রমাগত কিনারার দিকে আসতে থাকে, ঠিক তেমনি মহাকর্ষীয় তরঙ্গ বিগ ব্যাং ঘটার পর থেকে থেকে ক্রমাগত তার পরিধি বিস্তৃত করে মহাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে। মহাবিশ্ব তাই এখনো সপ্রসারমান।
বিজ্ঞানীরা জানান, তারা পৃথিবী থেকে শত কোটি আলোকবর্ষ দূরে সূর্যের চেয়ে প্রায় ৩০ গুণ ভারী দু’টি কৃষ্ণ গহ্বরের সংঘর্ষ থেকে সৃষ্টি এই মহাকর্ষীয় তরঙ্গ শনাক্ত করেছেন। এই তরঙ্গের অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ায় মহাবিশ্ব সৃষ্টির মহাবিস্ফোরণ বা বিগ ব্যাং তত্ত্বের ধারণাকে আরও সুদৃঢ় করল।
মহাকর্ষীয় তরঙ্গ শনাক্তের জন্য বিজ্ঞানীরা লেজার রশ্মি ভ্রমণ করতে পারে-এমন চার কিলোমিটার দীর্ঘ টানেল তৈরি করেন। মহাকর্ষীয় তরঙ্গের প্রভাবে এই লেজার রশ্মিই অতি সামান্যতম বিচ্যুতিও পরিমাপের ব্যবস্থা করা হয় ওই টানেলে। লেজার ইন্টারফেরোমিটার গ্র্যাভিটেশনাল-ওয়েভ অভজারভেটরি (লিগো) নামে পরিচিত এই সিস্টেম একটি পরমাণুর ব্যাসের ১০ হাজার ভাগের এক ভাগ পর্যন্ত সূক্ষ্ম দৈর্ঘ্য পরিমাপ করতে পারে। গবেষকেরা বলছেন, পৃথিবী থেকে ১০০ কোটিরও বেশি আলোকবর্ষ দূরে দুটি কৃষ্ণগহ্বরের সংঘর্ষের ফলে স্থান-কাল কীভাবে বেঁকে যায়, তা তাঁরা পর্যবেক্ষণ করেছেন। কৃষ্ণগহ্বর দুটি একে অন্যের চারপাশে চক্রাকারে ঘুরতে ঘুরতে এক পর্যায়ে একসঙ্গে মিশে যায়।
মহাকর্ষীয় তরঙ্গ আমাদের গ্রাভিটি সম্পর্কে যে ধারণা দেয় তা আর অন্য কোনভাবে পাওয়া সম্ভব নয়। বিজ্ঞানীরা আশা প্রকাশ করছেন এই আবিস্কার মহাবিশ্বের সৃষ্টি সম্পর্কে আরও সুনির্দিষ্টভাবে জানার পক্ষে সহায়ক হবে।
১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬
সূত্র: ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন, লিগো