শনিবার ● ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৫
প্রথম পাতা » যুক্তি ও দর্শন » অবিশ্বাসের দর্শন - অভিজিৎ রায় এবং রায়হান আবীর
অবিশ্বাসের দর্শন - অভিজিৎ রায় এবং রায়হান আবীর
জাগৃতি থেকে প্রকাশিত
মূল্য: পাঁচশত পঞ্চাশ টাকা
সংশয়বাদ, বস্তুবাদ, নিরীশ্বরবাদ এ অঞ্চলের জনমানসে নতুন কোনো দার্শনিক মতবাদ নয়। ভারতবর্ষে সংগঠিত ও প্রচারিত ধর্মগুলোর তুলনায় বস্তুবাদের ভিত্তি বরং অনেক প্রাচীন। চার্বাক দর্শন থেকে শুরু করে বৌদ্ধ দর্শন, সাংখ্য দর্শনসহ অনেক কিছুতেই বস্তুবাদী উপাদানের জাজ্জ্বল্যময় সাক্ষ্য বর্তমান। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, সেই বলিষ্ঠ ঐতিহ্য আমরা ধরে রাখতে পারি নি। রাজশক্তি আর ক্ষমতাধরদের প্রাতিষ্ঠানিক চাপে, রাষ্ট্রীয় এবং ধর্মীয় নিপীড়ন আর নিগ্রহে সেই বস্তুবাদিতার উপাদান অনেকটাই হারিয়ে গিয়েছে। কিন্তু এই ঐতিহ্যের পুনরুত্থান আমরা যেন লক্ষ্য করছি একবিংশ শতকের নবীন অথচ প্রাজ্ঞ কিছু লেখকের হাত ধরে। অভিজিৎ রায় এবং রায়হান আবীরের সুলিখিত-জনবোধ্য ভাষায় লেখা ‘অবিশ্বাসের দর্শন’ বইটি বাংলাভাষী ঈশ্বরবিশ্বাসী থেকে শুরু করে সংশয়বাদী, অজ্ঞেয়বাদী, নিরীশ্বরবাদী কিংবা মানবতাবাদী এবং সর্বোপরি বিজ্ঞানমনস্ক প্রতিটি পাঠকের অবশ্য পাঠ্য। আধুনিক বিজ্ঞানের একদম সর্বশেষ তত্ত্ব-তথ্য-উপাত্তের উপর ভিত্তি করে লেখা এ বই ধর্মান্ধতা এবং কুসংস্কার মুক্তির আন্দোলনের মাধ্যমে আগামীদিনের জাত-প্রথা-ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণীবৈষম্যমুক্ত সমাজ তৈরির স্বপ্ন দেখা বাংলাভাষী শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের গণজোয়ারকে প্রেরণা যোগাবে।
অভিজিৎ রায় এবং রায়হান আবীর প্রথমবারের মতো বহুল আলোচিত সেই নতুন দিনের নাস্তিকতার সাথে বাঙালি পাঠকদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন এই বইয়ের মাধ্যমে। তারা দেখিয়েছেন, ঈশ্বরের অস্তিত্বের পক্ষে যেসব ‘প্রমাণ’ হাজির করা হয় তার সবগুলোই আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞানের দৃষ্টিতে অসম্ভব এবং অযৌক্তিক। মহাবিশ্বের উৎপত্তি হলো কীভাবে, প্রাণের অস্তিত্ব এলো কীভাবে, কীভাবেই বা জীববৈচিত্র উদ্ভুত হলো, প্রাণীজগতে এবং সর্বোপরি মহাজগতের প্রেক্ষাপটে মানুষের অবস্থান কোথায়, কোথায় থাকে আত্মা, কিংবা স্বর্গ, নরক- এ ধরণের জীবন-জিজ্ঞাসার উত্তর জানার জন্য উন্মুখ মানুষ সহস্রাব্দকাল ধরে জ্ঞানচর্চায় লিপ্ত ছিল। মানুষের জানা এবং না-জানা জ্ঞানের মধ্যবর্তী ফাঁকটুকুর মধ্যে তথাকথিত অলৌকিক সর্বশক্তিমান ‘ঈশ্বর’কে বসিয়ে রেখেছিল বিভিন্ন ধর্মের মেওয়া বেঁচা সওদাগরেরা। কিন্তু এখন সময় পাল্টেছে, আমাদের জ্ঞানের পরিসর বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই জ্ঞানের ‘গ্যাপ’ পূরণে ঈশ্বরের প্রয়োজন নেই। বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে ‘ঈশ্বর’ আজ সম্পূর্ণ ব্যর্থ একটি অনুকল্প। কেবল ঈশ্বর নিয়ে দার্শনিক আলোচনায় নিজেদের সীমাবদ্ধ না রেখে লেখকেরা সাহসের সাথে একে একে খুলে ফেলেছেন বহুকাল ধরে আবদ্ধ রুদ্ধ দুয়ারের ধাতব কপাটগুলো। তারা দেখিয়েছেন, একজন চিন্তাশীল মানুষের জন্য নাস্তিকতাই হতে পারে একটি গ্রহনযোগ্য যৌক্তিক অবস্থান। ‘অবিশ্বাসের দর্শন’ তাই আমাদের চিরচেনা নিকষ কালো অন্ধকারের পরাধীন জগৎ থেকে আলোতে উত্তরণের এক স্বপ্নীল দর্শন।