সোমবার ● ১ জুলাই ২০১৩
প্রথম পাতা » বিজ্ঞান সংবাদ » আজ সুপারমুন - জোসনায় স্নাত হবে পৃথিবী
আজ সুপারমুন - জোসনায় স্নাত হবে পৃথিবী
আজ সুপারমুন। প্রতি মাসে একবার পূর্ণিমা ঘটা একটি নৈমত্তিক মহাজাগতিক ঘটনা। কিন্তু কক্ষপথ পরিভ্রমনে পৃথিবীর সাপেক্ষে চাঁদের দূরত্বের হ্রাস-বৃদ্ধির কারণে চাঁদ কখনো কখনো পৃথিবীর তুলনামূলক কাছে চলে আসে, আবার কখনো দূরে অবস্থান করে। সুপারমুন হচ্ছে কক্ষপথে পৃথিবীর সাপেক্ষে চাঁদের নিকট অবস্থানে সংঘটিত পূর্ণিমা। এসময় পূর্ণিমার চাঁদকে অন্যান্য সাধারণ সময়ের তুলনায় বেশি উজ্জ্বল দেখায়। পৃথিবীর নিকটতম থাকা অবস্থায় চাঁদকে দূরতম অবস্থার তুলনায় ১৪ শতাংশ বড় এবং ৩০ শতাংশ উজ্জ্বল দেখতে পাওয়া সম্ভব। জ্যোতির্বিজ্ঞানের ভাষায় পৃথিবীর সাপেক্ষে কক্ষপথে চাঁদের নিকটতম অবস্থানকে বলা হয় পেরিজি (perigee) এবং দূরতম অবস্থানকে বলা হয় অ্যাপজী (apogee)।
পৃথিবীর সাথে চাঁদের সর্বনিম্ম দূরত্ব প্রায় ৩৬৩,১০৪ কি.মি. বা ২২৫,৬২৩ মাইল এবং সর্বোচ্চ দূরত্ব প্রায় ৪০৫,৬৯৬ কি.মি. বা ২৫২,০৮৮ মাইল। পৃথিবী ও চাঁদের গড় দূরত্ব ৩৮৪,৪০০ কি.মি বা ২৩৮,৮৫৫ মাইল। ২৩ জুন, ২০১৩ তারিখে সংঘটিত পূর্ণিমাটি হবে সুপারমুন, অর্থাৎ এই পূর্ণিমায় চাঁদ পৃথিবীর নিকট অবস্থানে থাকবে, যা হবে এই ২০১৩ সালে চাঁদের সবচেয়ে নিকটতম অবস্থান।
প্রতি ১৪টি চান্দ্র মাস সম্পন্ন হওয়ার পর একটি সুপারমুন ঘটে থাকে। অর্থাৎ একটি সুপারমুন সংঘটিত হওয়ার পরে ১৫তম পূর্ণিমাটি হচ্ছে সুপারমুন। সময়ের হিসেবে এটি ১ বছর ১মাস ১৮ দিন।
সুপারমুন নামকরণের ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে জ্যোতিষশাস্ত্র বা অ্যাস্ট্রোলজি, জ্যোতির্বিদ্যা নয়। জ্যোতিষী রিচার্ড নোলে সর্বপ্রথম ১৯৭৯ সালে সুপারমুন শব্দটি ব্যবহার করেন। পরবর্তীতে জ্যোতিবিজ্ঞানেও নামটি সমাদৃত হয়। মূলত দৃশ্যমান বৃহদাকৃতি চাঁদের কারণেই সুপারমুন নামটি গ্রহণযোগ্য।
সুপারমুন খালিচোখেই পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব। প্রকৃতিতে সুপারমুনের তেমন কোন প্রভাব নেই। পূর্ণিমা জোয়ারের ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করে থাকে, তখন স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে কিছুটা বেশি উচ্চতায় জোয়ার হয়ে থাকে। সুপারমুনের ক্ষেত্রেও প্রায় তেমনটি ঘটে থাকে, বড়জোড় অন্যান্য পূর্ণিমার চেয়ে সামান্য উচ্চতা বৃদ্ধি পায়, তবে তা এতোটাই নগন্য যে সাধারণ চোখে তফাত বের করা সম্ভব নয়। এছাড়া সুপারমুনের অন্য কোন প্রভাব নেই যা জলোচ্ছাস বা বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বয়ে আনতে পারে।
মানুষের জীবন ও কাজের উপর সাধারণ পূর্নিমা বা সুপারমুন কোনটিরই প্রভাব নেই, এটি শুধুমাত্র প্রাকৃতিক নিয়মে ঘটে চলা একটি মহাজাগতিক ঘটনা মাত্র। তাই মানুষের শরীরের উপর পূর্ণিমার ক্ষতিকার প্রভাব বা ভাগ্য নিয়ন্ত্রণের মত বিশ্বাস নেহায়েৎ কুসংস্কার। কোনরকম কুসংস্কারে বিশ্বাস না করে, ভ্রান্ত ধারনায় পরিচালিত না হয়ে স্নাত হোন এই বিশেষ পূর্ণিমার অপূর্ব জোছনায়। [২৩ জুন, ২০১৩]