সোমবার ● ৩০ জুলাই ২০১২
প্রথম পাতা » বিজ্ঞান সংবাদ » চাঁদের সৃষ্টি কি কোন আকস্মিক সংঘর্ষের কারনে?
চাঁদের সৃষ্টি কি কোন আকস্মিক সংঘর্ষের কারনে?
চাঁদের সৃষ্টি নিয়ে চলমান বিতর্কের মাঝে সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা নতুন একটি তত্ত্বের অবতারণা করেছেন। এতে বলা হচ্ছে-মহাজাগতিক কোনো বস্তুর সঙ্গে নবীন পৃথিবীর সংঘর্ষের ফলে সৃষ্ট উপাদান দিয়েই চাঁদ সৃষ্টি। কিন্তু সংঘর্ষের গতি-প্রকৃতি নিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে বিজ্ঞানীরা কিছু বলতে পারেননি।
বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী ইকারাস-এ প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে গবেষকরা জানিয়েছেন, আগে যেরকম ভাবা হতো তার চেয়ে অনেক বড় আকারের ও দ্রুত গতিসম্পন্ন কোন মহাজাগতিক বস্তুর সঙ্গে পৃথিবীর সংঘর্ষ ঘটেছিল।
এই ধরনের তত্ত্বকে আমরা প্রতিষ্ঠিত পারি কিছু নির্দিষ্ট তথ্যের আলোকে যেমন: আমরা চাঁদ সম্পর্কে কতটুকু জানি, চাঁদের সৃষ্টির জন্য কোন সাংঘর্ষিক প্রক্রিয়া জড়িত এবং সুনির্দিষ্ট মধ্যাকর্ষণ কাজ করছিল যা কম্পিউটার মডেলে দেখানো হয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিজ্ঞানীদের যে ধারণার উপর জোর দিচ্ছেন তা হলো: মঙ্গল গ্রহের আকারের ধীর গতির একটি বস্তু যাকে ‘থিয়া’ নামে অভিহিত করা হয়, এর সঙ্গে নবীন পৃথিবীর সংঘর্ষ ঘটে। ফলে উভয়েই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং বিশাল পরিমাণে গলিত পদার্থ নিঃসরিত হয়ে মেঘে রূপ নেয়। এই মেঘের অনেকাংশ পরবর্তীতে শীতল হয়ে পরস্পরকে আকর্ষণ করে মিলিত হয়ে চাঁদ সৃষ্টি করে।
এই তত্ত্ব নির্দেশ করে যে নবীন পৃথিবী এবং থিয়া নামের বস্তুটির উপাদান দিয়েই সম্মিলিতভাবে চাঁদের সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে একটির সঙ্গে আরেকটির অবশ্যই কোনো না কোনোভাবে পার্থক্য থাকবে। পৃথিবী ও চাঁদ থেকে নেয়া কিছু নমুনা অনুর ক্ষেত্রে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট উপাদানসমূহের অনুপাতে আইসোটোপিক বিন্যাস পর্যবেক্ষণের পর এই জটিলতা দেখা দিয়েছে। যখন চাঁদেরও পৃথিবী সদৃশ লৌহসমৃদ্ধ কেন্দ্র রয়েছে, কিন্তু চাঁদের বেলায় লৌহের অনুপাত একইরকম নয়। কিন্তু কম্পিউটার মডেলে ‘থিয়া’র সাথে এর সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া গেছে। পৃথিবী ও চাঁদের অক্সিজেন আইসোটোপের অনুপাত প্রায় এক পাওয়া যায়, যদিও এটি কেন হচ্ছে সে সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা একমত হতে পারেননি।
গত মার্চ মাসে বিজ্ঞানীরা ন্যাচার জিওসায়েন্সে নতুন এক সমীক্ষায় দেখিয়েছেন যে এ্যাপোলো মিশনের মাধ্যমে সংগ্রহ করা চাঁন্দ্র নমুনা নিয়ে বিশ্লেষনের পর তারা দেখেছেন ধাতব টাইটেনিয়ামের আইসোটোপিক বিন্যাস পৃথিবী ও চাঁদের ক্ষেত্রে প্রায় কাছাকাছি। তারা যুক্তি দেখিয়েছেন, চাঁদ পৃথিবীরই কোন অংশ থেকে উদ্ভূত।
এখন সুইজারল্যান্ডের বার্নের সেন্টার ফর স্পেসের বিজ্ঞানী আন্দ্রে রিউফার ও তাঁর সহযোগী গবেষকেরা বলছেন, বিশাল আকারের ও দ্রুত গতিসম্পন্ন বস্তুটির সাথে নবীন পৃথিবীর সংঘর্ষ ঘটলেও ঐ বস্তুটি থেকে অতি সামান্য পরিমাণেই উপাদান নির্গত হয়েছিল। ফলে চাঁদ সৃষ্টিতে ব্যবহৃত উপাদানের বেশির ভাগই ছিল পৃথিবী থেকে নির্গত উপাদান।